বুধবার, ৩১ মে ২০২৩, ০২:২৪ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
ভালো দাম পেলে বিক্রি হবে আসমা ভাবির লালু পালোয়ান। বেনাপোল থেকে ১৭টি সোনার বিস্কুট সহ আটক ১ ঝিনাইদহে প্রবীণ হিতৈষী সংঘের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত ঝিনাইদহে উৎসবমুখর পরিবেশে দিনব্যাপী ফল উৎসব বিশ্বে ধর্মীয় শান্তি ও সম্প্রীতিতে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ- বান্দরবানে মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং শার্শার জামতলায় প্রধান মন্ত্রিকে হত্যার হুমকি ও বিএনপির সম্মেলনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল। ঝিনাইদহে ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা বিতরণ ঝিনাইদহে “মার্কেট অর্গানাইজেশন এবং লিজিং” প্রচার কর্মশালা ঝিনাইদহের ঘোড়শাল ইউনিয়নের উন্মুক্ত বাজেট ঘোষনা কালীগঞ্জের “স্বপ্ননীড় আশ্রয়ণ প্রকল্পের” ৫৯ বেঁদে পরিবারের স্বপ্নপূরণ

যৌতুকের বলি গৃহবধু আঁখি, আইনজীবী স্বামী আনিস কারাগারে

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ১৪১ Time View

বাঁশখালী প্রতিনিধি, চট্টগ্রামঃ বিয়ের দু’বছর যেতে না যেতেই গৃহবধু মাহমুদা খানম আঁখি এখন পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত। বিয়ের পর মাস কয়েক ভালোই চলেছিল তাদের সংসার। কিন্তু আঁখির ঘাতক স্বামী আইনজীবী আনিসুল ইসলাম (৩২) তার স্ত্রীর ভালোবাসাকে অশ্রদ্ধা দেখিয়ে বাবার সম্পত্তির লোভে পড়ে বিভিন্ন সময়ে যৌতুকের দাবীতে মারধর করতো।

সর্বশেষ গত ১৮ ডিসেম্বর যৌতুক হিসেবে দাবিকৃত ১০ লাখ টাকা না দেয়ায় আঁখির পেটে লাথি মেরে তাকে গুরুতর আহত করা হয়। ঘটনার পর ৪-৫ দিন তার হাতের মোবাইল কেড়ে নেয়, গৃহবন্ধী করে চিকিৎসাবঞ্চিত করে রাখে। পরে অবস্থা সংকটাপন্ন হলে মাহমুদা খানম আঁখিকে নগরির পার্কভিউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আঁখির পেটের আতুড়ি (নাড়ি) ছিড়ে যাওয়ার কথা বলেন। তারা দ্রুত অপারেশন করার জন্য বলেন।

কিন্তু ঘাতক স্বামী টাকার অভাব দেখিয়ে তাকে অপারেশনের ব্যবস্থা করেন নি। তখন আঁখির জীবনপ্রদীপ নিভু নিভু। অাঁখির প্রবাসী বাবা মুফিজুর রহমানের মাধ্যমে আঁখির মা ও ভাই বিষয়টি জেনে ছুটে যান হাসপাতালে। পরে তাকে সেখান থেকে নিয়ে চমেক-এ ভর্তি করা হয়। অবশেষে মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। কথাগুলো অশ্রুসিক্ত নয়নে বললেন আঁখির গর্ভধারনী মা রোকসানা আক্তার। গৃহবধু আখিঁ সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবি’র ৩য় সেমিস্টারের ছাত্রী। আঁখির মা রোকসানা আক্তার বলেন, বিভিন্ন সময়ে যৌতুকের দাবী তুলে আমার মেয়েকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতো তার স্বামী। সর্বশেষ ১০ লক্ষ টাকা যৌতুক চাইলে আমরা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে মেয়েকে গুরুতর জখম করে পেটের নাড়ি ছিঁড়ে পেলে। এমনকি আমার মেয়ে নগরিতে একটি টিউশন করতো।

মাস শেষ হবার আগেই স্বামী নিজেই টাকা নিয়ে আসতেন। এতো বেশী লোভী ছিল যা বলার মতো নয়। আমি আমার মেয়ে হত্যার উপযুক্ত শাস্তি হিসেবে তার ফাঁসি চাই। এদিকে মাহমুদা খানম আঁখির মৃত্যু হয়েছে উল্লেখ করে চান্দগাঁও থানায় মামলা করা হয়। মামলার বাদী আঁখির বড় ভাই মো. মিজানুর রহমান। গতকাল সোমবার সকালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১ (ক)/৩০ ধারায় তিনি মামলাটি করেন। মামলায় আইনজীবী স্বামী আনিসুল ইসলামের (৩২) পাশাপাশি তার মা ফরিদা আক্তার ও বোন হামিদা বেগমকেও আসামি করা হয়। এদিকে গতকাল মহানগর হাকিম আদালত স্বামী আনিসুল ইসলামকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগে রোববার রাতে পাঁচলাইশ থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আনিসুল ইসলাম বাঁশখালী পৌরসভার উত্তর জলদী চুম্মার পাড়া ৪ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে।

পরিবার নিয়ে থাকতেন চান্দগাঁও থানাধীন পাঠানিয়া গোদা এলাকার শওকত আবাসিকের মাসুমা খাতুন ভবনের ৩য় তলায়। আঁখি উত্তর জলদীর সৌদি প্রবাসী মফিজুর রহমানের মেয়ে ও সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবি ৩য় সেমিস্টারের ছাত্রী। প্রায় দুই বছর আগে তাঁরা একে অপরকে পছন্দ করে বিয়ে করেন। থানায় করা মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়, বিয়ের কিছুদিন পর থেকে আঁখির মাধ্যমে তার বাবার কাছ থেকে যৌতুক হিসেবে বিভিন্ন অংকের টাকা দাবি করে আসছিলেন আনিসুল। এ টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে বিভিন্ন সময় আঁখিকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। এর মধ্যে আঁখির সুখের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন সময় যৌতুক হিসেবে বিভিন্ন অংকের টাকা প্রদান করা হয়। গত দুই মাস পূর্বে আঁখির মোবাইল ফোন জোরপূর্বক কেড়ে নেন আনিসুল। এ ছাড়াও তিনি অফিসে যাওয়ার সময় আঁখিকে তালাবদ্ধ রুমে আটকে রেখে মানসিক নির্যাতন করতেন। এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়, গত দুই মাস পূর্বেও আঁখির কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন আনিসুল। অপরাগতা প্রকাশ করলে ফের তাকে মারধর ও নির্যাতন করা হয়।

এতে আঁখি গুরুতর আহত হলে গত ১৮ ডিসেম্বর তাকে নগরীর পার্কভিউ হাসপাতালে এবং পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও চান্দগাঁও থানার এসআই মো. জাকির হোসেন বলেন, মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে যা যা করা প্রয়োজন সবকিছুই করা হবে। এদিকে গৃহবধু আঁখির ঘাতক স্বামী আনিসুলের ফাঁসির দাবীতে গতকাল সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে সাউদার্ন ইউনিভাসিটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেন। অভিলম্বে তারা ঘাতক স্বামী আনিসের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান। ছবি- ঘাতক স্বামী আনিসুল ইসলাম, গৃহবধু মাহমুদা খানম আঁখি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021 SN BanglaNews
কারিগরি সহযোগিতায়: