বুধবার, ৩১ মে ২০২৩, ০৪:০৮ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
ভালো দাম পেলে বিক্রি হবে আসমা ভাবির লালু পালোয়ান। বেনাপোল থেকে ১৭টি সোনার বিস্কুট সহ আটক ১ ঝিনাইদহে প্রবীণ হিতৈষী সংঘের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত ঝিনাইদহে উৎসবমুখর পরিবেশে দিনব্যাপী ফল উৎসব বিশ্বে ধর্মীয় শান্তি ও সম্প্রীতিতে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ- বান্দরবানে মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং শার্শার জামতলায় প্রধান মন্ত্রিকে হত্যার হুমকি ও বিএনপির সম্মেলনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল। ঝিনাইদহে ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা বিতরণ ঝিনাইদহে “মার্কেট অর্গানাইজেশন এবং লিজিং” প্রচার কর্মশালা ঝিনাইদহের ঘোড়শাল ইউনিয়নের উন্মুক্ত বাজেট ঘোষনা কালীগঞ্জের “স্বপ্ননীড় আশ্রয়ণ প্রকল্পের” ৫৯ বেঁদে পরিবারের স্বপ্নপূরণ

বেনাপোল কাস্টমসে রাজস্ব ঘাটতি ৫০৯ কোটি টাকা

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০২২
  • ১৬০ Time View

বেনাপোল প্রতিনিধিঃ বেনাপোল কাস্টমস হাউসে চলতি অর্থবছরে ( ২০২১-২২ )প্রথম ৬ মাসে ৫০৯ কোটি টাকা রাজস্ব কম আদায় হয়েছে। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল আড়াই হাজার কোটি টাকা, সেখানে আদায় হয়েছে এক হাজার ৯৯১ কোটি টাকা। তবে ২০১৯-২১ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসের চেয়ে একশ’ ১ কোটি টাকা বেশি আদায় হয়েছে। ওই সময়ে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা।

চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে পণ্য আমদানি হয়েছে ১১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৪ মেট্রিক টন। আর রপ্তানি হয়েছে ২ লাখ ৭৬ হাজার ৩ মেট্রিক টন। গত বছরের চেয়ে আমদানি কিছুটা কমলেও রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে আমদানি হয়েছিল ১১ লাখ ৭৩ হাজার ৩২ মেট্রিক টন এবং রপ্তানি হয়েছিল এক লাখ ৭৬ হাজার ২৯৬ মেট্রিক টন।

বেনাপোল কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর আমদানি পণ্য থেকে ৬ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ২৪৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। অর্থবছর শেষে আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা। বছরটিতে রাজস্ব আয়ের গ্রোথ অন্যান্য সময়ের চাইতে বেশি হলেও ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৫৭ কোটি টাকা।

এ ছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ঘাটতি ছিল ৩ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ঘাটতি ১১৪৫ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ তে ঘাটতি ১৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।

এদিকে চলতি বছরে এত বড় অংকের লক্ষ্যমাত্রা আদায় নিয়ে সংশয় রয়েছে সব মহলে। তারা বলছেন, রাজস্ব আয় বাড়াতে হলে বাণিজ্য সম্প্রসারণে কাস্টমস ও বন্দরে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে। তা না হলে কখনো এত বড় অংকের রাজস্ব আদায় সম্ভব হবে না।

জানা গেছে, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের এপথে বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। তবে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকায় ব্যবসায়ীরা চাহিদা মতো পণ্য আমদানি করতে পারেন না। এতেই বার বার রাজস্ব আয়ে ধস নামছে।বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, চলতি অর্থবছরে এত বড় অংকের রাজস্ব আদায় কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। কারণ একদিকে করোনা পরিস্থিতি ও অন্যদিকে সুষ্ঠুভাবে বাণিজ্য সম্পাদনে অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়ায় ক্ষোভ রয়েছে ব্যবসায়ীদের। ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও বেনাপোল বন্দরের অব্যবস্থাপনা নিয়ে অনেকবার বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে বাণিজ্য বন্ধ করেছেন। আবার ভারতের কালিতলায় অবৈধভাবে পার্কিংয়ের নামে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের হয়রানি করছে। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। যে কারণে অনেক ব্যবসায়ী এই বন্দর ছেড়ে চলে গেছে। তবে বেনাপোল বন্দর উন্নয়ন ভারতে হয়রানি বন্ধ হলে এ বন্দর থেকে লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ রাজস্ব আয় কাস্টমসের পক্ষে সম্ভব।আমদানিকারক রেজোয়ান আহমদ মুরাদ বলেন, ভারতের কালিতলায় অবৈধভাবে পার্কিংয়ের নামে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের হয়রানি করছে। একটি ট্রাক দেশে প্রবেশ করতে এক মাস সময় লেগে যাচ্ছে। একেতো পণ্য আসতে দেরি হচ্ছে, আবার ওপারে প্রতিদিন ট্রাক প্রতি ২ হাজার রুপি দিতে হয়। এতে বেনাপোল দিয়ে আমদানি কমিয়ে অন্য বন্দরে যেতে বাধ্য হচ্ছি।

এদিকে বেনাপোল বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সন্তোষজনক না। আমদানিকারকদের নিজেদের দায়িত্ব নিয়ে বন্দরে পণ্য পাহারা দিতে হয়। বন্দর থেকে পণ্য চুরি, বারবার রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডে অনেক ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ব্যবসা বন্ধ করেছেন। এসব কারণে পর পর ৮ থেকে ৯ বছর ধরে এ বন্দর থেকে আমদানি পণ্যে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ চাহিদা মতো রাজস্ব আহরণ করতে পারছেন না।

বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, বড় অংকের রাজস্ব আদায় অনিশ্চিত। কারণ নানান অব্যবস্থাপনায় আমদানি কমেছে এ বন্দর দিয়ে। বেনাপোল কাস্টমসে আমদানি পণ্যের গুণগত মান পরীক্ষণে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নাই। এতে খুলনা ও ঢাকা থেকে  পরীক্ষা করাতে মাসের অধিক সময় লেগে যায়। ফলে দীর্ঘ সময় পণ্য চালান আটকা পড়ে ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেনাপোল কাস্টমস হাউসে বিএসটিআই ও বিএসআইআরের শাখা স্থাপনের দাবি আজও বাস্তবায়ন হয়নি। এতে অনেক ব্যবসায়ী এ বন্দর ছেড়েছেন।

যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, বেনাপোল বৃহৎ বন্দর হলেও এর কোনো সুফল আমরা পাচ্ছি না। সপ্তাহে সাতদিন বাণিজ্যসেবা চালু থাকলেও সেটি কাগজে-কলমে। বাণিজ্য প্রসার করতে হলে বৈধ সুবিধা ও অবকাঠামো উন্নয়নের বিকল্প নেই।

তিনি আরো বলেন, বন্দরের ধারণক্ষমতা ৫০ হাজার টন। কিন্তু এখানে সবসময় পণ্য থাকে কমপক্ষে দেড় লাখ টন। জায়গার অভাবে পণ্য খালাস করতে না পেরে ভারতীয় ট্রাক বন্দরে দিনের পর দিন দাঁড়িয়ে থাকছে। খোলা আকাশের নিচে রোদ-বৃষ্টিতে মূল্যবান পণ্যসামগ্রী পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বৈধ সুবিধা পেলে এ বন্দর থেকে সরকারের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে মনে করেন তিনি।

বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার জানান, বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নে ইতিমধ্যে অনেকগুলো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে পণ্যগারের জন্য জমি অধিগ্রহণ, নতুন পণ্যগার নির্মাণ ও বন্দর এলাকায়  রাস্তাঘাটের অনেকটা উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। এছাড়া বন্দরে আরো জমি অধিগ্রহণ ও পণ্যের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এসব উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত হলে এ বন্দরে বাণিজ্য আরো গতি বাড়বে বলেও জানান তিনি।

বেনাপোল কাস্টম হাউজের কমিশনার মো. আজিজুর রহমান  জানান, শুধুমাত্র ভারতের কালিতলায় অবৈধভাবে আমদানিবাহী গাড়ি আটকিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হচ্ছে। এতে আমদানিকারকরা অন্য বন্দরে চলে যাচ্ছে। আবার আমদানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বেনাপোল বন্দরে পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকায় বাণিজ্য সম্প্রসারণ হচ্ছে না। এতে কয়েক বছর ধরে  রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। তারপরও চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে আমরা গত বছরের চেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় করেছি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021 SN BanglaNews
কারিগরি সহযোগিতায়: