ইসমাইলের এই সাফল্যের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো গদখালীতে বাণিজ্যিকভাবে টিউলিপ চাষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।বাংলাদেশের মতো গরমপ্রধান দেশে টিউলিপ ফোটানো এখন পর্যন্ত রীতিমতো সাধনারই বিষয়। অপরিসীম ধৈর্য ধরে সফল হয়েছেন ইসমাইল হোসেন।
ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালীর মাঠগুলোতে এখন শোভা পাচ্ছে রজনীগন্ধা,গোলাপ, জারবেরা,গাঁদা,গ্লাডিওলাস,জিপসি,রডস্টিক, কেলেনডোলা,চন্দ্র মল্লিকাসহ ১১ ধরনের ফুল।
“এবার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে টিউলিপের পরীক্ষামূলক চাষে সাফল্যের মুখ দেখেছে গদখালির একজন ফুলচাষি।এতে ফুল চাষিরা আবারো নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে।ফুলের বাজার ছাড়াও স্থানীয় পর্যটনশিল্পের প্রসারে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে টিউলিপ।”
পরীক্ষমূলক চাষে সফল হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে টিউলিপ চাষের উদ্যোগ নিয়েছেন ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা গ্রামের ফুলচাষি ইসমাইল হোসেন।জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ইসমাইলের বাগানে দোল খেতে শুরু করেছে বাহারি রঙের টিউলিপ। দারুণ এ দৃশ্য দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছে দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষ।
পাবনা থেকে আসা দর্শনার্থী সাখাওয়াত হোসেন বলেন,আমি শুনেছি গদখালীতে ইসমাইল ভাই টিউলিপ ফুল চাষ করছে।আমি বিভিন্ন মিডিয়াতে এই ফুল দেখে নিচের চোখে দেখার ইচ্ছে জাগে।তাই আজ চলে আসলাম টিউলিপ ফুল দেখতে।খুব ভাল লাগছে।
বাগআঁচড়া জামতলা থেকে আসা মিন্টু হোসেন বলেন,এই ফুল আমি বিভিন্ন সিনেমায় দেখেছি কিন্তু আজ গদখালীতে আমাদের দেশের মাটিতে দেখে অবাক লাগছে ।আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে আমি গদখালীতে নাকি ইউরোপে।
গদখালীর অনলাইন ফুল ব্যবসায়ী আল-আমিন হোসেন বলেন,ইসমাইল চাচার প্রথম পরীক্ষামূলক ভাবে এই টিউলিপ ফুল চাষ করে সফল হয়েছেন।এখন এই ফুল দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা এসে ভিড় জমাচ্ছেন ।আমাদের খুবই ভাল লাগছে।
প্রবীন চাষী মুজিবর রহমান(৬০) বলেন,আমরা আগে ধান পাট চাষ করতাম কিন্তু তাতে এতো লাভ ছিল না।এখন ফুল চাষে বিরাট লাভ।আমাদের ইসমাইল এই প্রথম টিউলিপ ফুল চাষ করিছে দেখি আমার খুব ভাল লাগছে।এখন অল্প জমিতে মেলা টাকার মুখ দেখা যায়।
ইসমাইল হোসেন বলেন,নেদারল্যান্ডসের জাতীয় ফুল টিউলিপ। নেদারল্যান্ডস শীত প্রধান দেশ হওয়ায় টিউলিপ ফুলের চাষ এদেশে করতে গেলে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষ ছাউনি তৈরি করতে হয়েছে।পাঁচ শতক জমিতে পরীক্ষামূলক ভাবে ৫হাজার বাল্ব (কন্দ) লাগায়।৬ জানুয়ারি লাগানো বাল্ব থেকে চারা হওয়ার পর ২০জানুয়ারি তাতে কুড়ি দেখতে পাওয়া যায়।
ঝিকরগাছার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ বললেন, ‘নেদারল্যান্ডস থেকে গাজীপুরের দেলোয়ার হোসেনের মাধ্যমে সরকারি খরচে আট প্রজাতির পাঁচ হাজার বাল্ব আমদানি করি। ওই বাল্ব গদখালীর ইসমাইল হোসেনের ৫ শতক জমিতে গত ৬ জানুয়ারি বপন করা হয়। ২২ জানুয়ারি থেকে টিউলিপ ফুল ফুটতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে সানরাইজ, অ্যান্টার্কটিকা হোয়াইট (সাদা), লা বেলা রেড (লাল), মিল্কশেক রেড (লাল) প্রজাতির টিউলিপ ফুল ফুটতে শুরু করেছে।পর্যায়ক্রমে আট প্রজাতিরই ফুল ফুটবে বলে আশা করি। আমরা ফুলের রাজ্য গদখালীকে মিনি নেদারল্যান্ডস হিসেবে পরিচিত করে তুলতে চাই।’
মিলন কবির/এসএনবিএন প্রতিবেদক