এবার ভালবাসা দিবসের গীফট নেদারল্যান্ডসের সুগন্ধি ফুল ‘লিলিয়াম’ ও জাতীয় ফুল ‘টিউলিপ’।এছাড়াও রঙিন গ্লাডিওলাস,জারবেরা,রজনীগন্ধা ও নানা রঙের গোলাপ তো রয়েছেই।
ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা গ্রামের ফুলচাষি আজিজুর রহমানের দাবি বাংলাদেশে এটাই প্রথম বাণিজ্যিক চাষ।উপজেলার পানিসারা গ্রামে ২শতক জমিতে এই চাষ শুরু করেছেন ফুল চাষী আজিজুর রহমান।
‘বাংলাদেশে প্রথম আমার হাত দিয়েই লিলিয়াম ফুলের চাষ শুরু হয়’ জানিয়ে গদখালির ফুলচাষি বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন,২০০৮ সালে আমি নিজেই ১০কাঠা জমিতে চাষ করেছিলাম।সে সময় প্রতিবেশি দেশ ভারত থেকে বীজ সংগ্রহ করি। নেদারল্যান্ড থেকে ভারতের কৃষি বিভাগ লিলিয়ামের বীজগুলো এনেছিলেন।তবে জমি থেকে বীজ সংগ্রহের পদ্ধতি জানা না থাকায় পরবর্তিতে আর এই ফুলের চাষ করা সম্ভব হয়নি।
“বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র ও কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন এই ফুলের বীজ কিভাবে সংরক্ষণ করা যায় তার উপর গবেষণা করে একটা উপায় বের করেছেন। আগামীতে গদখালির মাঠে এই ফুলটির ব্যাপক চাষ হবে বলে আশা করেন তিনি।”
২০০৮ সালের পর ২০১৭সালে পরীক্ষামুলক ভাবে পানিসারার আজিজুর রহমান,সোনিয়া পারভীন,সাজেদা বেগম চাষ শুরু করেন।
বিদেশী জাতের এই ফুল লিলিয়ামের বীজ সংগ্রহের দুঃপ্রাপ্যতা এবং গরম আবহাওয়ার কারণে এই ফুলের চাষ সম্প্রাসরণ করা সম্ভব হচ্ছে।কিন্তু
দেশ বিদেশে এই ফুলের চাহিদার কথা মাথায় রেখে ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা বিভাগের একদল গবেষক লিলিয়াম ফুলের ওপর গবেষণা শুরু করেন।২০১৭ সালে এসে তারা সফলতা অর্জন করেন। এই দলটি এ পর্যন্ত এশিয়াটিক জাতের ৩০টি জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করে গবেষণার মাধ্যমে দেশের আবহাওয়া উপযোগী দুটি জাত উদ্ভাবন করেছেন।
আজিজুর রহমান বলেন,বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আরআরএফ পরীক্ষামুলক ভাবে চাষের জন্য ৮৪টি লিলিয়াম ফুলের বাল্ব (কন্দ) আমাকে দেয়।ওই গাছের ফুলের খুব চাহিদা ছিল কিন্তু বীজ সংরক্ষন করতে পারিনি। পরে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র আমাকে ৪০০ কন্দ দেয় এর থেকে আমি এবার বাণিজ্যিক চাষ শুরু করেছি।
ভালবাসা দিবস ও ২১ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি লিলিয়াম ফুলের স্টিক বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
“একটি লিলিয়াম ফুলের গাছ বিক্রি করছি ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়। ভিনদেশী এই ফুল বাংলাদেশে প্রথম চাষ হওয়ায় বেশ আগ্রহ ফুলপ্রেমিদের। প্রতিদিন ফুলক্ষেত দেখতে আসছেন দুর দুরান্ত থেকে মানুষ।”
পানিসারা গ্রামের অপর ফুলচাষি সাজেদা বেগম বলেন,কৃষি গবেষণা কেন্দ্র থেকে দেওয়া বাল্ব ব্যবহার করে একটি প্রদর্শনী প্লট তৈরি করেছি।এটা খুব দামি ফুল। বাজারে চাহিদাও ব্যাপক।এতে আমরা খুব লাভবান হবো মনে করছি।
লিলিয়াম ফুল চাষী সোনিয়া পারভীন বলেন,কৃষি গবেষণা কেন্দ্র আমার বীজ দেয়।ডিসেম্বরে প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তায় এই বীজ লাগায়।রোপনের প্রায় দুই মাস পর ফুল আসা শুরু করেছে।জমির ছাউনিতে ব্যবহার করা হয়েছে বিশেষ ধরনের নেট।বাগানে ফুল দেখতে খুবই সুন্দর লাগছে।
এটি লাভজনক চাষ।একটি গাছ বা স্টিক ১৫০-২০০ টাকায় বিক্রি করা যায়।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিস্টিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান গবেষক ড.ফারজানা সিনথান বলেন,বর্ণ বৈচিত্র্য ও দীর্ঘ স্থায়িত্বের জন্য কার্ট ফ্লাওয়ার হিসেবে বিশ্বের চতুর্থ স্থান দখল করে আছে লিলিয়াম ফুল।বর্ণ বৈচিত্র্য ও সুগন্ধের কারনে বাংলাদেশেও এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে।আমদানি করা প্রতিটি ফুলট আমাদের দেশে তিন’শ থেকে সাড়ে তিন’শ টাকায় বিক্রি হয়।
মিলন কবির/এসএনবিএন