মোঃ সাহিদুল ইসলাম শাহীন,বেনাপোল(যশোর):- তীব্র বেদনা ও আত্মত্যাগের অহংকার অমর একুশ বাঙ্গালী জাতির গৌরবের দিন আজ। রক্তরাঙ্গা একুশে ফেব্রুয়ারী পৃথিবী’র মাণচিত্রে এনে দিয়েছে স্বাধিকার শক্তি। ছালাম,রফিক,বরকত আর জব্বারের মত লাখো শহীদ ভাষা সৈনিকের আত্মত্যাগে ভিন্ন ভাষার বিপরীতে আমরা পেয়েছি স্বতন্ত্র “বাংলা ভাষা”। নিজ ভাষার জন্য এতো আত্মত্যাগ আর দীর্ঘসম সংগ্রাম ও আন্দোলন পৃথিবী’র কোন দেশে এমনটি হয় নাই। মূলতঃ
বাংলা ভাষা আন্দোলন ছিল ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৬ পর্যন্ত তৎকালীন
পূর্ব বাংলায় (বর্তমান
বাংলাদেশে) সংঘটিত একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন। মৌলিক অধিকার রক্ষাকল্পে
বাংলা ভাষাকে ঘিরে সৃষ্ট এ আন্দোলনের মাধ্যমে তদানীন্তন
পাকিস্তান অধিরাজ্যের অন্যতম
রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণদাবির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে এ আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ ধারণ করলেও, বস্তুত এর বীজ রোপিত হয়েছিল বহু আগে; অন্যদিকে, এর প্রতিক্রিয়া এবং ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী।

তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের দোষরদের উদ্ধু ভাষাকে ভুলুন্টিত করে সে সময়কার ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ সহ অন্যান্য ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ পূর্ব-পাকিস্তানে(বর্তমান বাংলাদেশ) বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠিত করতে অগ্রনি ভূমিকা পালণ করে। ভাষা আন্দোলনের সেই সংগ্রামকে পুঞ্জিভূত করে সে সময়কার তুখোড় ছাত্র নেতা আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙ্গালী জাতিকে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে, ভাষার সেই আন্দোলন গড়িয়ে পড়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু’র নেতৃত্বের সেই মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদেরকে দিয়ে গেছে “বাংলাদেশ” নামের একটি স্বাধীন এবং সার্বভৌম রাষ্ট্র, যা পৃথিবী’র মাণচিত্রে আজ দৃশ্যমান। তবে,আন্তর্জাতিকভাবে “বাংলা ভাষা”র স্বীকৃতি পেতে আমাদেরকে স্বাধীনতার পরবর্তী অনেক বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে।

১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশের সাফল্যের ঝুলিতে যোগ হয় সেই অনন্য অর্জন। বাঙালীর চেতনার প্রতীক, ভাষার জন্য আত্মত্যাগের দিন, ২১’শে ফেব্রুয়ারি জাতীয় শহীদ দিবস পায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা। জাতিসংঘের সেই স্বীকৃতির পর থেকে পৃথিবীর নানা ভাষাভাষী মানুষ দিনটি পালন করছে। ভাষার জন্য বাঙালির আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করার পাশাপাশি নিজস্ব ভাষা আর সংস্কৃতিকে লালন করার প্রয়োজনীয়তা বিশ্বব্যাপী আরও বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।
নিজেদের জীবণ বিসর্জন দিয়ে যারা বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করে গেলেন জাতির পক্ষ থেকে আমরা তাদেরকে গভীর ভাবে স্মরণ করি।
সারা বিশ্বে আজ পালিত হচ্ছে বাঙ্গালী জাতির প্রাণের ভাষা “বাংলা ভাষা দিবস”। আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত এই ভাষা দিবস বিশ্বের ন্যায় প্রায় প্রতিবছর অনেক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে পালিত হয়ে থাকে। তবে,এবার করোনা সংক্রমণ এবং ওমিক্রনের মত ভয়াবহ ব্যাধীর কারনে সরকার মানুষের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে লোক সমাগমে সতর্কতাবলম্বন করেছেন।
সরকারের সেই নির্দেশনার প্রতিফলন ঘটেছে বাংলাদেশ-ভারতের বেনাপোল এবং পেট্রাপোল মাঝামাঝি স্থান নো-ম্যানসল্যান্ডে। দীর্ঘ বছর ধরে দুই দেশের যৌথ আয়োজনে নো-ম্যানস ল্যান্ডে মানুষের সমাগম ঘটিয়ে সরকারী পর্যায় অত্যান্ত জাকজমকপূর্ণভাবে “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” উদযাপন হয়ে থাকে। কিন্ত “করোনা এবং ওমিক্রন” এর কারনে এবারকার আয়োজনে তা শীথিল করা হয়েছে।
নো- ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু’র ম্যুরালের সম্মুখে তৈরী করা হয়েছে অস্থায়ী শহীদ মিনার। দুই দেশের প্রশাসনিক পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” এর শুভ সূচনা ঘটান। তবে,এর আগে প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতরাত ১২টা ১ মিনিটে শার্শা উপজেলা পরিষদ কার্যালয় প্রাঙ্গনে স্থায়ীভাবে নির্মিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু’র ম্যুরালে ফুল দিয়ে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। ঐ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন-উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা-মীর আলিফ রেজা, রাসনা শারমিন মিথি (সহকারী কমিশনার, ভূমি), মোঃ আহসান কবির(আই সি টি অফিসার,উপজেলা পরিষদ কার্যালয়),মোঃ মামুন খান(ওসি,শার্শা থানা) সহ পুলিশ সদস্য,আনসার সদস্য ও উপজেলার অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তাবৃন্দ।
ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বণগাঁও এর বিধায়ক-বিশ্বজিৎ দাস। সাথে ছিলেন-প্রসেনজিৎ ঘোষ(ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েত প্রধান),মমতা বালা ঠাকুর(প্রাক্তন সাংসদ),আলো রানী সরকার(তৃণমুল কংগ্রেস নেতা)।
বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন- ৮৫,যশোর-১ শার্শা আসনের এমপি শেখ আফিল উদ্দিন। সাথে ছিলেন- মোঃ আজিজুর রহমান(বেনাপোল কাস্টম কমিশনার),মোঃ সিরাজুল হক মঞ্জু(শার্শা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও শার্শা আ. লীগ সভাপতি),বেনাপোল স্থলবন্দর পরিচালক-মোঃ মনিরুজ্জামান,উপ-পরিচালক-আব্দুল জলিল, উপ-পরিচালক-মামুন কবির তরফদার, মীর আলিফ রেজা( শার্শা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা), অধ্যক্ষ ইব্রাহীম খলিল(শার্শা উপজেলা আ.লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও যশোর জেলা পরিষদ সদস্য),মোঃ এনামুল হক(সভাপতি,বেনাপোল পৌর আ.লীগ),মোঃ নাসির উদ্দিন(সাধারণ সম্পাদক,বেনাপোল পৌর আ.লীগ),মোঃ অহিদুজ্জামান অহিদ(শার্শা যুবলীগ সভাপতি),মোঃ সোহরাব হোসেন(শার্শা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক), মোঃ কবির উদ্দিন আহম্মেদ তোতা(১০ নং শার্শা সদর ইউনিয়ন পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান),বেনাপোল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান-বজলুর রহমান।

পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-বেনাপোল পোর্টথানার নব-নিযুক্ত অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোঃ কামাল হোসেন ভূঁইয়া, মোঃ গোলাম রসুল(ওসি-২),বেনাপোল চেকপোষ্ট ইমিগ্রেশন অফিসার ইনচার্জ(ওসি) রাজু আহম্মেদ,মোঃ ইলিয়াছ হোসেন(ওসি-২),শার্শা উপজেলার ডি আই ও-দেবাশিষ, শার্শার আনসার প্রধান কর্মকর্তা-আব্দুল্লাহ-আল রাসেল,বেনাপোল ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্স প্রধান-রতন কুমার দেবনাথ(ওয়্যার হাউজ ইন্সপেক্টর)

এ ছাড়াও অন্যান্যদের মধ্যে অংশ নেন-শার্শার এমপি’র এসিসট্যান্ট সেক্রেটারী-আসাদুজ্জামান আসাদ, শার্শা ছাত্রলীগ সভাপতি-আব্দুর রহিম সরদার,সাধারণ সম্পাদক-ইকবাল হোসেন রাসেল, সাংগঠনিক সম্পাদক-আল-আমিন রুবেল, বেনাপোল পৌর যুবলীগ আহবায়ক-আহাদুজ্জামান বকুল,যুগ্ম-আহবায়ক-জসিম উদ্দিন,বেনাপোল পৌর স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি-জুলফিকার আলী মন্টু,সাধারন সম্পাদক-মোঃ কামাল হোসেন,সাংগঠনিক সম্পাদক-নাজিম উদ্দিন রাব্বি, বেনাপোল পৌর ছাত্রলীগ সাবেক সভাপতি- আব্দুল্লাহ-আল মামুন,সাবেক সাধারণ সম্পাদক-তৌহিদুল ইসলাম তৌহিদ, বড়আঁচড়া ওয়ার্ড আ.লীগ সভাপতি-আব্দুল হামিদ, মোঃ কামাল হোসেন(বড়আঁচড়া রাসেল স্মৃতি সংঘের প্রতিষ্ঠাতা) এবং মোঃ জামাল হোসেন(সভাপতি,রাসের স্মৃতি সংঘ), আ.লীগ নেতা-বড় আলী কদর,আরিফুজ্জামান ভাদু সহ আ.লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতা-নেতৃবৃন্দ।
নো-ম্যানস ল্যান্ডে আয়োজিত “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” এর সকল প্রকার আয়োজনের দায়িত্ব পালন করেন-৪৯,বিজিবি’র যশোর সদর ঝুমঝুমপুরস্থ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক- মোঃ মাসুদ রানা এবং চেকপোষ্ট ক্যাম্পের সুবেদার-নজরুল ইসলাম।