মোঃ সাহিদুল ইসলাম শাহীন,বেনাপোল(যশোর): আজ “২৬ মার্চ”, ইতিহাস সৃস্টি করা ঐতিহাসিক এই দিনটি জাতীয় দিবস হিসেবে স্বীকৃত। “উর্দ্ধু ভাষা বর্জন এবং বাংলা ভাষাভাষি বাঙ্গালী জাতীর জন্য একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাস্ট্র পাওয়ার লক্ষ্যে জাতীকে সুসংগঠিত করতে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দান(বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যাণ) এ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাষন দানের মধ্য দিয়ে জাতিকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। ঐ দিন স্বাধীনতার জন্য জাতীকে পুরোপুরি ভাবে পাক হানাদার ও তার দোষরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ঘোষনা দেন।

ইতিহাস সৃস্টি করা এবং বর্তমানে আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত বঙ্গবন্ধু’র সেই ঐতিহাসিক ভাষণ পাক হানাদারেরা কটু চোখে দেখতে শুরু করে, মার্চের ২৫ তারিখ রাত থেকে শুরু করে গণহত্যা, রাতভর নিরস্ত্র বাঙ্গালীর উপর ঝাপিয়ে পড়ে শত্রুপক্ষ পাক হানাদার বাহিনী, অপারেশন সার্চলাইট নামের অভিযান চালায় বাঙ্গালী জাতির উপর ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে শুরু হওয়া পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত পরিকল্পিত গণহত্যা, যার মাধ্যমে তারা ১৯৭১ এর মার্চ ও এর পূর্ববর্তী সময়ে সংঘটিত বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দমন করতে চেয়েছিল, এই গণহত্যা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের আদেশে পরিচালিত, অপারেশনটির আসল উদ্দেশ্য ছিল ২৬ মার্চ এর মধ্যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) সব জেলা শহর দখল করে নেয়া এবং রাজনৈতিক ও সামরিক বিরোধীদের এক মাসের মধ্যে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া, বাঙালিরা তখন পাল্টা প্রতিরোধ সৃষ্টি করে,যা পাকিস্তানি পরিকল্পনাকারীদের ধারণার বাইরে ছিল, মে’৭১ এর মাঝামাঝি সময়ে বেশ কয়েকটি জেলা শহরের পতন ঘটার মধ্য দিয়ে অপারেশন সার্চলাইটের প্রধান অংশ শেষ করে তারা।

এই সামরিক আক্রমণ ১৯৭১ সালের গণহত্যাকে ত্বরান্বিত করে, এই গণহত্যা বাঙালিদের ক্রুদ্ধ করে তোলে যে কারণে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাঙ্গালি অফিসার ও সৈনিকেরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে, এই ভয়াবহ গণহত্যা ১৯৭১ এর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটায় এবং বাঙালিরা দখলদারী পাকিস্তানি বাহিনীকে বিতাড়িত করার সংগ্রামে লিপ্ত হয়, পরিণতিতে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ কমান্ড ” মিত্র বাহিনী” এর কাছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিনাশর্তে আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে,এর জন্য আমাদেরকে ৩০ লাখ মানুষের জীবণ বিসর্জন দিতে হয়েছে, ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম হারাতে হয়েছে।
২৬ মার্চ স্বাধীনতার এই মহান দিনটিকে স্মরণে আনতে দিনটিকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে,তবে ২৫ মার্চের রাতে পাক হানাদারদের ঘৃণ্যতম হত্যাযজ্ঞের প্রতিশোধ স্বরুপ এ দিনটিকে বাংলাদেশ সরকার “গণহত্যা” দিবস বলে ঘোষণা দিয়েছে। গতরাত ১২ টা থেকে ১২ টা ১ মিনিট অর্থাৎ ৬০ সেকেন্ড(১ মিনিট বৈদ্যুতিক আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়)। আজ সরকারী ছুটির দিন।
স্ববাধীনতা পরবর্তী প্রায় প্রতি বছর অনেক উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্য দিয়ে সরকারী এবং বেসরকারী ভাবে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালণ করা হচ্ছে।
এ উপলক্ষ্যে যশোর জেলার শার্শা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
কর্মসুচির মধ্যে রয়েছে-প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনীর মাধ্যমে দিবসের শুভ সূচনা করা, অফিস-আদালতে পতাকা উত্তোলন,বেনাপোল পোর্টথানাধীন কাগজ পুকুর স্মৃতি সৌধে পুস্পমাল্য অর্পণ ও দোয়া অনুষ্ঠান,সকল শ্রেণী পেশার মানুষের সমাবেশে কুচকাওয়াজ ও শরীর চর্চা প্রদর্শণ,ক্রীড়া অনুষ্ঠান, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদ গুলোয় চলচ্চিত্র প্রদর্শন,বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা,হাসপাতাল,এতিমখানা এবং শিশু পরিবারে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন,মসজিদ,মন্দির,গীর্জা সহ অন্যান্য উপসানালয়ে বিশেষ মোনাজাত/প্রার্থনা,মহিলাদের জন্য মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক আলোচনা সভা ও খেলাধূলার আয়োজন সবশেষে প্রীতি ফুটবল প্রতিযোগীতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

সকাল ৮.৩০ মিনিটে শার্শা উপজেলার রাসেল স্মৃতি মিনি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত কুচকাওয়াজ ও শরীর চর্চা প্রদর্শনীর উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন ৮৫,যশোর-১ শার্শা আসনের এমপি শেখ আফিল উদ্দিন। তিনি জাতীয় পতাকা উত্তোলণ ও কবুতর উড়িয়ে অনুষ্ঠানের শুভসূচনা ঘটান। এ সময় সেখানে অংশ নেন-উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান-বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক মঞ্জু, উপজেলা নির্বাহী অফিসার-মীর আলিফ রেজা, সহকারি কমিশনার(ভূমি) রাসনা শারমিন মিথি, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান-আলেয়া ফেরদৌস,শার্শা থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মামুন খান,বেনাপোল পোর্টথানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোঃ কামাল হোসেন ভূঁইয়া, শার্শা মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার-মোজাফ্ফর হোসেন, শার্শা আনসার কমান্ডার-আব্দুল্লাহ আল রাসেল,বেনাপোল ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ইনচার্জ-রতন কুমার দেবনাথ। শার্শা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান-কবির উদ্দিন আহম্মেদ তোতা, শার্শা যুবলীগ সভাপতি-অহিদুজ্জামান অহিদ,যুবমহিলালীগ,যশোর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক-শামিমা সালমা আলম, বেনাপোল পৌর মহিলালীগ নেতা-জান্নাতুল ফেরদৌস রোজী, বেনাপোল পৌর আ.লীগ সভাপতি-এনামুল হক মুকুল,সাধারণ সম্পাদক-মোঃ নাসির উদ্দিন, এমপিি’র পিএ-আসাদুজ্জামান আসাদ,
সাংগঠনিক সম্পাদক ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড, যশোর জেলা শাখার সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক- মোঃ ফারুক হোসেন উজ্জল, শার্শা ছাত্রলীগ শাখার সাবেক সভাপতি-আব্দুর রহিম সরদার,সাধারণ সম্পাদক-ইকবাল হোসেন রাসেল, ছাত্রনেতা-আল আমিন রুবেল,শার্শা বাস্তুহারালীগ সভাপতি-মোহাম্মদ আলী,পুটখালী আ.লীগ নেতা-সিরাজুল ইসলাম,বাবু মেম্বর, মাহতাব উদ্দিন সহ আরও অনেকে।
কুচকাওয়াজে অংশ নেওয়া সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে-মুক্তিযোদ্ধা সংসদ,পুলিশ,বিএনসিসি,আনসার-ভিডিপি,ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স,স্কুল,কলেজ,মাদ্রাসা সহ বিভিন্ন শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান,শিশু-কিশোর সংগঠন,বাংলাদেশ স্কাউটস ও গার্লস গাইড।
কুচকাওয়াজ শেষে শার্শা উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। অতিথিবৃন্দ উক্ত আলোচনা সভায় অংশ নেন।
উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত সন্মানিত অতিথিদেরকে সন্মাননা উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয়।