শুক্রবার, ০৯ জুন ২০২৩, ০৬:৪৪ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
কলারোয়ায় কিশোর গ্যংয়ের হামলায় তরুণ নিহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় প্রথম ঝিনাইদহের আশিকুজ্জামান প্রান্ত সরকারি চাকুরিজীবী সকলকে সরকারের নির্দেশিত ডকুমেন্টস অনুযায়ী কাজ করতে হবে- পার্বত্য সচিব মো. মশিউর রহমান শৈলকুপার সোহরাব আলী ৬১ বছর পর স্কুলের বেতন পরিশোধ করলেন! ঋষি ফাউন্ডেশন’র ১১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন বাগআঁচড়ায় এমপি আফিল উদ্দিনের আগমন উপলক্ষে সামটায় নিবার্চন প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত শার্শায় বর্ণাঢ্য আয়োজনে যায়যায়দিনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হৃদয়ের বন্ধন ব্লাড ব্যাংকের তৃতীয় বর্ষে পদার্পনে মিলনমেলা ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত শার্শায় জামগাছ থেকে পড়ে স্কুল ছাত্রের অকাল মৃত্যু ভালো দাম পেলে বিক্রি হবে আসমা ভাবির লালু পালোয়ান।

একজন আদর্শবান “বাবার গল্প”

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ১৬৬ Time View
একজন আদর্শবান “বাবার গল্প”
একজন আদর্শবান “বাবার গল্প”

আপনার বাবা কবে মারা গিয়েছিলেন?

২১ ডিসেম্বর।১৬বছর আগে ২০০৬ সালের এই দিন সকাল আটটার সময় আমার  বাবা  আলহাজ্ব ডাঃ এবিএম কুদরত উল্যা আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে চলে গেছেন।

বাবার মৃত্যু বার্ষিকী আসলে আপনার কেমন লাগে?

প্রতিবছর দিনটি আসলে মনটা বেদনায় ভরে যায়।বাবা একটি বার দেখার জন্য আজ আমার হৃদয়টা হাহাকার করছে কাউকে বুঝাতে পারছি না।কেন তুমি চলে গেলে বহু দূরে আমাকে ছেড়ে।মেঘের ওপারে তো আর নেটওয়ার্ক থাকে না তাই হয়তো বাবার কল আর আসে না।’বাবার না থাকার’ কষ্ট যে কতটা সেই বোঝে যার বাবা নেই। ১৬বছর ধরে হারিয়ে খুঁজি বাবা তোমাকে।তার সাথে কথা বলতে বলতে এমন আবেগ আফ্লুত হয়ে কাঁন্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। জানিনা আমার বাবা কেমন আছে পরপারে। বাবা যেন ভাল থাকে।

এলাকার মানুষের কাছে আপনার বাবার অবস্থান কেমন ছিল?

আমার বাবা একজন হাঁসি-খুশি মানুষ ছিলেন। তিনি সবার সঙ্গে সব সময় হাসি-খুশিভাবে কথা বলতেন। আমার বাবা পাকিস্তান আমলে চাকরি পেয়ে যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার ‘বাঘুটিয়া উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে’ যোগদান করেন।যোগদানের কিছু দিনের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়।যুদ্ধের শুরুতে নোয়াপাড়ার বিহারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠে।তারা মুক্তিযোদ্ধাদের উপর হামলে পড়ে।সরকারি চিকিৎসক হিসেবে আমার  বাবা আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা দিতে থাকেন।এতে তিনি রাজাকার ও বিহারীদের চক্ষুশূল হয়ে তাদের রোশানলে পড়েন।কিন্তু তিনি তো দমবার মানুষ না।তাদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে স্বাধীনতাকামিদের পাশে দাড়ান।বিষয়টি সংসদ সদস্য পীরজাদা হাদিউজ্জামানের নজরে আসলে তিনি বাবাকে একটি মুজিব বাহিনীর কার্ড তৈরি করে দিয়ে নোয়াপাড়া মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে চিকিৎসার দ্বায়িত্ব দেন।এরপর তিনি আত্নগোপনে থেকে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা দিয়ে আসছিলেন।

দেশ স্বাধীনের পর তিনি নাড়ির টানে বদলি হয়ে শার্শা উপজেলার ‘সামটা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে’ আসেন।বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তাকে আবারও বদলি করে দেওয়া হয়।এবার তাকে পাঠানো হয় ঝিকরগাছা উপজেলার ‘গঙ্গানন্দপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে’।হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতা দখলের পর তাকে আবারও বদলি করা হয়।তখন নিজ জেলায় চাকুরি করা যাবে না বলে একটি আদেশ জ্বারি করা হয়।তাই সেবার পাঠানো হয় ঝিনেদাহ জেলার মহেশপুর উপজেলার ‘শ্যামকুড় উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে’।

এরপর হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের কার্যালয়ের এসিসি (আমার গ্রামের ছেলে)ইউসুফ আলির সহায়তায় একটি বিশেষ আদেশ বলে বাবাকে আবারো যশোরের শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফেরত পাঠানো হয়।পরে চাকুরি জীবনের শেষ পর্যন্ত তিনি শার্শার ‘চালিতাবাড়িয়া উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে’ চিকিৎসক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করে গেছেন।

সরকারী চাকুরী শেষে তিনি কি করতেন?

চাকুরি জীবন শেষ করে তিনি চিকিৎসা পেশায় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন।এরই মধ্যে তিনি হজব্রত পালন করেন।২০০১ সালে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর নানা দূশ্চিন্তায় তিনি স্ট্রোক করেন।খুলনা যশোর সাতক্ষীরা ও কলকাতায় চিকিৎসার পর ২০০৬ সালে তিনি আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে চলে যান।

আপনারা কয় ভাই বোন এবং তাদের সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন?

আমরা ছয় ভাইবোন।পাঁচটি বোন আমার।তাদের দেখভালের দ্বায়িত্ব আমার।মাঝে মাঝে ভাবি,আমি কি পারবো আমার বাবার মতো সৎ,সত্যবান, চরিত্রবান হতে? আমি কি পারবো- আমার বাবার মতো বাবা হতে? কবির ভাষায়- “ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে” আমার মাঝে যে এক শিশুর পিতা ঘুমিয়ে আছে,সে কি পারবে সৎ, সত্যবান, চরিত্রবান থেকে তার সন্তানের গর্বের অধিকার কে প্রতিষ্ঠিত করতে? বাবা আর আমাদের মাঝে নেই। আপনারা সবাই দোয়া করবেন আমার বাবা হাসি মুখেই যেন জান্নাতে প্রবেশ করেন।

কথা হয় ডিএসটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষক ও জামতলা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পেশ ঈমাম মাওলানা হাফিজুর রহমান এর সাথে।

তিনি বলেন, আমি দেখেছি প্রতি বছর আসাদ ভাইয়ের বাবার মৃত্যু বার্ষিকী ও দোয়া অনুষ্ঠানে আসি।কিন্তু আমি দেখেছি এই দিনে তিনি সব সময় অঝরে চোখের পানি ফেলে যান।পিতার প্রতি সন্তানের এমন ভালবাসা দেখে আমার খুব ভাল লাগে।আমি দোয়া করি আল্লাহ যেন তাকে জান্নাত বাসি করেন।

কথা হয় প্রতিবেশি সকিনা খাতুন এর  সাথে।

তিনি বলেন,জামতলা এলাকায় সেই সুমায় ভালো ডাক্তার ছেলো না।কুদরত উল্যা ডাঃ সেকুন এই এলাকার নাম করা ডাক্তার ছেলো।কুদরত উল্যা ভাই আমাদের বিরাট যত্ন কইরতো।আমাদের বাড়ি কারোর কিছু হোলি খবর দিলি ছুইটি চৈলি আইসতো।ভাই বিরাট ভালো মানুষ ছেলো।

লেখক:মিলন কবির।গল্প:আসাদুজ্জামান আসাদ।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021 SN BanglaNews
কারিগরি সহযোগিতায়: