বসির আহাম্মেদ,ঝিনাইদহ প্রতিনিধি- ঝিনাইদহে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহার, উপরিভাগ কেটে নেওয়াসহ নানা কারণে ক্রমাগত পুষ্টিগুণ হারাচ্ছে মাটি। এতে ফসল উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। পাশাপাশি ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের।
ঝিনাইদহ জেলা মৃত্তিকা গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে, জেলায় ৬ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাটিতে প্রয়োজনের তুলনায় কম মাত্রার পুষ্টি উপাদান পাওয়া গেছে। এ জেলায় প্রতি ১০০ গ্রাম মাটিতে নাইট্রোজেন দশমিক ২৭ মাইক্রোগ্রামের পরিবর্তে রয়েছে দশমিক ০৯ মাইক্রোগ্রাম, যা অতি নিম্ন মাত্রার।

ঝিনাইদহে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহারে পুষ্টিগুণ হারাচ্ছে মাটি
ফসফরাস ২৩-৩০ মাইক্রোগ্রামের পরিবর্তে ১৫ থেকে ২২, পটাশিয়াম দশমিক ২৭ এর পরিবর্তে দশমিক ১৮ মিলিতুল্যাংক, সালফার ২৭ মাইক্রোগ্রামের পরিবর্তে ২২ থেকে ৩০, জিংক ১ দশমিক ৩৫ এর স্থলে দশমিক ৪৫ থেকে দশমিক ৯০ মাইক্রোগ্রাম রয়েছে। পাশাপাশি বোরন দশমিক ৪৫ মাইক্রোগ্রামের পরিবর্তে উচ্চমাত্রায় দশমিক ৬১, অম্লমান ৬ দশমিক ৬০ থেকে ৮ দশমিক ৪০ যা নিরপেক্ষ মাত্রার এবং বেশি দরকারি জৈব পদার্থ রয়েছে ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১ থেকে ১ দশমিক ৭০ শতাংশ, যা অতি নিম্নমাত্রায়।

ঝিনাইদহে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহারে পুষ্টিগুণ হারাচ্ছে মাটি
ঝিনাইদহ মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শিখা নাসরিন বলেন, আগে আমরা এক বা দুই ফসল উৎপাদন করতাম। জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য খাদ্যের চাহিদা বেড়েছে। সেক্ষেত্রে ৩ বা ৪ ফসল উৎপাদন করতে হচ্ছে। আর এই ফসল উৎপাদন করতে গিয়ে রাসায়নিক সারের বেশি ব্যবহার করতে হচ্ছে। যে কারণে মাটির পুষ্টিগুন দিন দিন কমে যাচ্ছে।
এদিকে কৃষকরা বলছেন আগের থেকে বর্তমানে দ্বিগুন পরিমান সার প্রয়োগ করতে হয়। নতুবা ফসল ভালো উৎপাদন হচ্ছে না।
সদর উপজেলার বিষয়খালী গ্রামের কৃষক আনারুল ইসলাম রানা বলেন, কয়েক বছর আগেও যে জমিতে ১০ কেজি সার দিয়ে আবাদ করতাম। সেই একই জমিতে এখন ২৫ কেজি সার দিতে হয়। অনেক সময় এতেও কোন কাজ হয় না। আমাদের তো উপায় নেই। ফসল উৎপাদন করতে হলে তো সার দিতেই হবে।

ঝিনাইদহে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহারে পুষ্টিগুণ হারাচ্ছে মাটি
কালীগঞ্জ উপজেলার কাষ্টভাঙ্গা গ্রামের কৃষক কামরুল বলেন, শুনেছি মাটি পরীক্ষা করে সার দিলে ভালো হয় কিন্তু কোথায় যাব কিভাবে করব তা তো কেউ কোনদিন বলেনি। মাটি পরীক্ষার বিষয়টি আরও সহজ করলে আমাদের জন্য ভালো হবে।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আজগর আলী বলেন, জলায় চাষযোগ্য জমি রয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার ২৩৫ হেক্টর। বর্তমানে জেলায় রাসায়নিক সারের চাহিদা ১ লাখ ৫৩ হাজার ১’শ ৯৭ মেট্টিক টন। প্রতি বছর ২ হাজার হেক্টর সারের চাহিদা বেশি হচ্ছে। এ অবস্থায় রাসায়নিক সারের পরিমিত ব্যবহার করতে আমরা কৃষকদের নানা পরামর্শ দিচ্ছি। সেই সাথে জৈব সারের ব্যবহার বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছি।