মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:১৪ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
ঝিনাইদহে ব্লাড ব্যাংকের উদ্যোগে এক হাজার মানুষের মাঝে ঠান্ডা পানি ও শরবত বিতরণ সাংবাদিকদের সাথে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সোহরাব হোসেনের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত বিএমএসএস’র বেনাপোল শাখা কমিটির অনুমোদন ঝিনাইদহে কৃষি ব্যাংকে হালখাতা অনুষ্ঠিত ঝিনাইদহ জেলা আনসার অফিসে ভোরের কাগজের সাংবাদিক অবরুদ্ধ, লাঞ্ছিত ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেন ভোগান্তির আরেক নাম, জনমনে তীব্র অসন্তোষ ঝিনাইদহে আগুনে পুড়লো ৫ বিঘা পানের বরজ ও বসত বাড়ি ঝিনাইদহে তীব্র তাপদাহে দেখা দিয়েছে পানির সংকট, হাজার হাজার নলকূপে উঠছে না পানি প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ত্রিপুরা সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী আ.লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান,ভাইস চেয়ারম্যানগণের নোমিনেশন জমা

খেজুরের রস সংগ্রহে ব্যস্ত ঝিনাইদহের গাছিরা

বসির আহাম্মেদ,ঝিনাইদহ প্রতিনিধি।
  • Update Time : শনিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৩
  • ৬১ Time View
খেজুরের রস সংগ্রহে ব্যস্ত ঝিনাইদহের গাছিরা
খেজুরের রস সংগ্রহে ব্যস্ত ঝিনাইদহের গাছিরা

“যশোরের যশ খেজুর গাছের রস” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আবহমান কাল থেকেই শীতের আগমনের সাথে সাথে ঝিনাইদহ জেলার গাছিরা খেজুরের রস সংগ্রহ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ বছর শীত একটু দেরীতে আসার ফলে গাছিরা যেন আরও বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঝিনাইদহের ৬টি উপজেলার গাছিরা ভোরের সূর্য্যরে আলোর সাথে সাথে দা, ঠুঙ্গি, দড়া, বালিধরা, বালু ইত্যাদি সরঞ্জাম নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ঝিনাইদহের সদর উপজেলার বিষয়খালী গ্রামের গাছি জবেদ আলী জানান, ৪৫ বছর ধরে গাছ কাটার কাজ করে আসছি। শীত পড়ার সাথে সাথে আমাদের খেজুর গাছ তোলার কাজ শুরু করে দিতে হয়। প্রথম দিকে গাছ গুলোর ডেগো পরিষ্কার করি তার ১২ দিন পর চাচ দিই। শুকানোর পর আবার চোখ ও রস আসার জন্য কাটি। প্রতিদিন কমপক্ষে ২৫-৩০ টার মতো গাছ তুলতে পারি।

প্রতিটা গাছ তোলা পর্যন্ত বা রস সংগ্রহ করা পর্যন্ত ২৫০/= হারে নিয়ে থাকি। এদিকে কুষ্টিয়া থেকে আসা আবদুর রহিম গাছির সাথে কথা হয়। শীত আসার সাথে সাথে আমারা বিভিন্ন অঞ্চলে খেজুর গাছ তোলার জন্য আসি, এবছর এখনও পর্যন্ত ১০০ টা গাছ তুলেছি। গাছিরা জানান, বাপদাদার পেশা আকড়ে ধরে আছি। আজকাল এ প্রজন্মের সন্তানেরা এ কাজ করতে চাই না। গাছিদের গাছিদা’র দাম তুলানামূলক বেশি হবার কারণে আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। এদিকে বিষয়খালী বাজারের কর্মকার ননী কুমার জানান, শীত পড়ার সাথে সাথে খেজুরগাছ তোলার দা’এর দাম বেড়ে যায়। লৌহ স্পাত মিস্ত্রিত একটি দা’এর মূল্য কমপক্ষে ১৮’শত টাকা। এছাড়া পূরাতন গাছিদা গুলোও মেরামত করতে দেখা যাচ্ছে। কর্মকাররা দিনরাত পরিশ্রম করছে। শীতের সাথে সাথে রসের হাঁড়ী তৈরী করতে বিষয়খালী খড়িখালীর পালেরা আগেভাগেই কাজ শুরু করে দিয়েছে। নমিতা রানী পাল জানান, শীত আসার একমাস পূর্বেই আমাদের মাটি সংগ্রহ করতে হয়। এ সময় আমাদের রসের হাড়ির ব্যাপক চাহিদা থাকে। এ জন্য তৈরী করে থাকি। এ বছর দ্রব্য মূলের ঊর্ধ্বগতির কারণে ভাড়ের মূল্য আগের বছরের তুলানায় একটু বেশিই হবে। সদর উপজেলা কৃষি অফিসার নূর-এ নবী জানান, এক সময় এ অঞ্চল প্রচুর খেজুর গাছ দেখা যেত। কালক্রমে সেসব আজ শুধু স্মৃতিতেই আমরা বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি। বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি সম্মিলিত উদ্যোগে খেজুর গাছ আবার রোপণ করা হচ্ছে। এখানকার খেজুরগাছের রসের স্বাদ ও চাহিদা অত্যন্ত বেশি।

খেজুর রসের ভিজাপিঠা, তাঁতরস, পায়েস, পাটালী যেন শীতকালে আমাদের নিত্য দিনের সঙ্গী। তাছাড়া খেজুরের কাচাঁ রসের স্বাদ জিহ্বায় না পড়লে যেন শীতের সকালটাই মিষ্টি হয় না। এই অঞ্চলে চাহিদা মিটিয়ে গাছিরা বাইরেও খেজুর রস ও গুড় বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে থাকে। শীতের সময় এলেই গাছিরা খজুরের গাছ তোলার জন্য দা, ঠুঙ্গি, দড়িসহ গাছ তোলার সকল উপকরণ আগে ভাগেই গাছিরা সংগ্রহ করে থাকে। শীত মৌসুমে কামারেরা গাছিদের দা তৈরি করতে তারাও ব্যস্ত সময় পার করে থাকে। শীতকালে গাছিদের খেজুরের গাছ তুলতে হয়। কারণ শীত মৌসুমে খেজুরের রস সংগ্রহ করতে হয়। জেলা শহরের পবহাটি গ্রামের গাছি ওহায়েদ আলী জানায়, প্রতিটা গাছ তুলতে তাদের ২৫০ টাকা পেয়ে থাকে। এবছর তিনি ২৫ টি গাছ তুলবেন। প্রথম দিন গাছ তোলার পর ৭ দিন পরে চাছ দিয়ে থাকে। ৮ দিন পর গাছেন লিপুতে থাকে। তার কিছুদিন পরেই রস সংগ্রহের জন্য পুরা দোমে গাছ কাটা শুরু হয়ে যায়। জেলা শহরের কর্মকার সরজিত অধিকারী জানায়, খেজুর গাছ তোলার দা আকার ভেদে ১৫’শত থেকে ১৮’শত দাম হয়ে থাকে। ঝিনাইদহ জেলা সহ বিভিন্ন উপজেলার গাছিরা ব্যস্ত সময় পার করছে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিষয়খালী গ্রামের গাছি জবেদ আলী আরো জানায়, শীত কাল আসলেই খেজুর গাছ তোলার কাজ করে থাকি। আগে আমাদের এলাকাতে প্রচুর খেজুর গাছ ছিলো কিন্তু এখন আর তেমন একটা গাছ চোঁখে দেখা যায় না। তিনি আরো বলেন, গাছিদের অভাবে অনেক গাছ তোলা সম্ভব হয় না। কারণ এ প্রজন্মের সন্তানেরা এ পেশায় আসতে চায়না। ফলে গাছিদের অভাবে গাছ কাটাবন্ধ থাকে। ফলে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ দিনের পর দিন গ্রাম বাংলা থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2023 SN BanglaNews
কারিগরি সহযোগিতায়: